বরগুনা প্রতিনিধি ॥ মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে গায়েবি লোহার সেতু দেখিয়ে পুনঃস্থাপনের প্রাক্কলন তৈরির অভিযোগ উঠেছে বরগুনা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের (এলজিইডি) নির্বাহী প্রকৌশলী ফোরকান আহম্মেদ খানের বিরুদ্ধে। খাল নেই, সেতুও নেই, রয়েছে বাঁশের সাকো। আমতলীর ওই বাঁশের সাকোকে লোহার সেতু দেখিয়ে পুনঃস্থাপনের প্রাক্কলন তৈরি করে দরপত্র আহ্বান করেছেন নির্বাহী প্রকৌশলী। ওই দরপত্র বাতিলপূর্বক সরেজমিন সার্ভে করে পুনরায় প্রাক্কলন তৈরির দাবি জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা। তারা এমন অনিয়মের সাথে জড়িতদের শাস্তি দাবি করেছেন।
জানা গেছে, বরগুনা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর ২০২০-২১ অর্থবছরে আইবিআরপি প্রকল্পের আওতায় ওটিএম পদ্ধতিতে গত ২৮ জুলাই আটটি প্যাকেজে ৩৩টি লোহার সেতু পুনঃস্থাপনের দরপত্র আহ্বান করে। যার প্রাক্কলন ব্যয় দরপত্রে উল্লেখ নেই। আগামীকাল ৬ সেপ্টেম্বর ওই দরপত্রে অংশগ্রহণের শেষ দিন। ওই দরপত্র নোটিশ প্রকাশিত হওয়ার পর বেড়িয়ে আসে অনিয়মের আসল চিত্র। ৩৩ টি সেতুর মধ্যে ২৫টি আমতলী উপজেলার হলদিয়া, গুলিশাখালী ও আমতলী সদর ইউনিয়নে এবং আটটি তালতলী উপজেলায়। ওই দরপত্রের নোটিশে উল্লেখ আছে বাঁশবুনিয়া খালের দক্ষিণে তক্তাবুনিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সামনে লোহার সেতু রয়েছে। অন্যদিকে একই স্কুলের সামনে একই সেতু নাশবুনিয়া খালে দেখানো হয়েছে। দৃশ্যত নাশবুনিয়া নামে কোনো খাল নেই। দক্ষিণ তক্তাবুনিয়া গ্রামের বৃদ্ধ সুশান্ত হাওলাদার ও আবদুল গনি গাজী বলেন, নাশবুনিয়া নামে হলদিয়া ইউনিয়নে কোনো খাল আছে বলে আমাদের জানা নেই। একই ইউনিয়নের তুজির বাজার ও রামজির বাজার নামক স্থানে দু’টি সেতু পুনঃস্থাপনের কথা উল্লেখ রয়েছে ওই নোটিশে। কিন্তু তুজির বাজার ও রামজির বাজারের সামনের হলদিয়া খালে কোনো সেতু নেই। ওই দুই বাজারের খালে রয়েছে বাঁশের সাকো। এলাহিয়া দাখিল মাদরাসার সামনে এবং দক্ষিণ রাওঘা কেরাতুল কোরান মাদরাসার সামনে সেতু পুনঃস্থাপন দেখানো হয়েছে কিন্তু ওই দুই মাদরাসার সামনের খালে সেতু নেই। ওখানেও রয়েছে বাঁশের সাকো। বাঁশের সাকো দিয়ে বর্তমানে মানুষ পারাপার হচ্ছে।
একই চিত্র গুলিশাখালী ও আমতলী সদর ইউনিয়নের। গুলিশাখালী ইউনিয়নের একই সড়কে ছয়টি সেতু পুনঃস্থাপন দেখানো হয়েছে। যার কোনো ভিত্তি নেই বলে জানান এলাকাবাসী। অভিযোগ রয়েছে বরগুনা নির্বাহী প্রকৌশলী ফোরকান আহম্মেদ খান সরেজমিন সার্ভে না করেই প্রভাবশালী ঠিকাদারের লোকজন দিয়ে গায়েবী সেতু পুনঃস্থাপনের প্রাক্কলন তৈরি করে কোটি কোটি টাকা আত্মসাতের পথ উন্মুক্ত করে দিয়েছেন। এ ছাড়া ওই ৩৩টি সেতু পুনঃস্থাপনের প্রাক্কলন তৈরিতে রয়েছে নানা অনিয়ম। প্রাক্কলনে প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দের চেয়ে দ্বিগুণ অর্থ বরাদ্দ দেয়া, জনস্বার্থে সেতু নির্মাণ না করা, সেতুর অ্যাপ্রোচ সড়কে প্রয়োজনের তুলনায় চারগুণ অর্থ বরাদ্দ দেয়া ও পুরনো সেতুর ব্যবহারযোগ্য মালামাল স্যালভেজ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত না করা। এ বিষয়ে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ বরগুনার নির্বাহী প্রকৌশলী ফোরকান আহম্মেদ খান বলেন, এ সেতুগুলো পুনঃস্থাপনের প্রাক্কলন আমি তৈরি করিনি। এর দায়ভার আমার নয়। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের প্রধান প্রকৌশলী ও প্রকল্প পরিচালকের নির্দেশে এ দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে।
Leave a Reply